তিনি হলিউডের রাজপুত্র। বাবা জীবন্ত কিংবদন্তী উইল স্মিথ। তার পুত্র জ্যাডেন স্মিথ কিশোর বয়সেই হয়েছেন মিলিয়নিয়ার। কীভাবে এই বয়সেই তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাইল্ড স্টার থেকে সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হলেন? যার বিলাসবহুল জীবন তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেয়েও অনেক বড়!
জ্যাডেনের শৈশব থেকেই ইচ্ছা ছিল অভিনয়ের। শৈশবের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয় বাবার হাত ধরে। ২০০৬ সালে শুরু হয় জ্যাডেনের ফিল্ম ক্যারিয়ার। তখন তার বয়স মাত্র ৮। পরে ‘দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস’ সিনেমাটি জনপ্রিয়তা পেলে জ্যাডেনের একাধিক সিনেমায় অভিনয়ের ডাক পড়ে। পরের বছর ‘ দ্য ডে দ্য আর্থ স্টুড স্টিল’ ও ২০১০ সালে সিনেমা ‘ দ্য ক্যারাটে কিড’ সিনেমায় জ্যাকি চ্যানের সঙ্গে অভিনয় করায় তিনি আরও বেশি আলোচিত হন। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য কিশোর বয়সেই এক মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন জ্যাডেন।
তবে হলিউডে তরতর করে যেমন উপরে ওঠা যায়, তেমনি নিচে নামতেও সময় লাগে না। শিশু বয়সে জ্যাডেন স্মিথের বেলায়ও তাই ঘটেছিল। বছর তিনেক পর বাবার সাথে আবার পর্দায় ফেরেন “আফটার আর্থ” সিনেমার মধ্যে দিয়ে। এই সিনেমা ছিল জ্যাডেন স্মিথের প্রাপ্তবয়স্ক তারকা হিসাবে নিজেকে মেলে ধরার প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু সিনেমাটি বিজনেস করতে পারেনি, বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
ব্যর্থ হওয়ার পর চারদিক থেকে জ্যাডেন স্মিথকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হয়। হোঁচট খেয়ে ভেঙে পড়েন উইল স্মিথ পুত্র। এরপর অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এবং নতুন পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেন। জ্যাডেন স্মিথ তার কাঙ্খিত নতুন পরিচয় খুঁজে পান সঙ্গীত ও ফ্যাশনের মাঝে। জ্যাডেন র্যাপ অ্যালবাম তৈরির জন্য বছরের পর বছর টাইম ইনভেস্ট করেন। গানগুলো হয়তো সেভাবে নাম করেনি কিন্তু পরিচিতি জ্যাডেনকে অনেক বড় মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ করে দেয়।
তবে জ্যাডেন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন ফ্যাশন আইকন হিসাবে। তিনি লুই ভিটনের মতো বড় ব্র্যান্ডের জন্য মেয়েদের পোশাক পরে প্রচলিত লিঙ্গীয় ধারণা ভেঙে দেন। জ্যাডেনের অদ্ভুত স্টাইল এবং দার্শনিক টুইট তাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। এখন তিনি কেবল উইল স্মিথের পুত্র নন, তিনি জ্যাডেন। বাবার পরিচয়ে আর জ্যাডেনকে পরিচিত হতে হয় না।
বিখ্যাত হওয়ার সাথে সাথে জ্যাডেনের ব্যক্তিগত জীবনও চলে আসে আতস কাঁচের নিচে। তার ডেটিং লাইফ নিয়ে ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোয় আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। মডেল, গায়িকা এবং নায়িকাদের সাথে জ্যাডেনের নাম জড়িয়ে যায়। বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে প্রায়ই তাকে এখানে সেখানে ঘুরতে দেখা যায়। আর এ কারণেই জ্যাডেনের বিলাসী জীবন নিয়ে নানা খবর ছড়াতে থাকে।
জুয়ার টেবিলে জ্যাডেন লাখ লাখ ডলার উড়িয়ে দেন। বন্ধুদের পেছনে এক ফুৎকার উড়িয়ে দেন লাখো ডলার। শুধু তাই নয়, জ্যাডেন তার পোশাকের পেছনেই বছরে খরচ করেন মিলিয়ন ডলারের বেশি। কোটি ডলারের মালিকের এমন জীবন দেখে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন! উইল স্মিথ-পুত্র বলেই কি জ্যাডেন এমন বেহিসাবী!
এত সমালোচনার মাঝে জ্যাডেনের গুনও রয়েছে। তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের গৃহহীনদের বিনামূল্যে ভেগান খাবার দেওয়ার জন্য ‘আই লাভ ইউ’ নামে একটি ফুড ট্রাক চালু করেন। এছাড়া প্লাস্টিক দূষণ কমাতে তিনি ‘জাস্ট ওয়াটার’ নামে একটি পরিবেশবান্ধব ওয়াটার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। জ্যাডেনের এই পজিটিভ স্টোরিগুলো মিডিয়ায় খুব কমই স্থান পায়।
এখন প্রশ্ন হলো জ্যাডেন স্মিথ তাহলে কে? বাবার অঢেল সম্পদে ভেসে যাওয়া এক বিলাসী সন্তান? নাকি প্রখ্যাত বাবার ছায়তল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাওয়া এক শিল্পী? মিলিয়ন ডলারের শিশু তারকা থেকে এক বিতর্কিত ফ্যাশন আইকন, জ্যাডেনের বিলাসবহুল জীবন হলিউডে অন্যতম চর্চিত এক বিষয়!