শোলে’র গাব্বার সিং ও দোস্ত দুশমন’র জসিম আজও কেন সেরা?

রুপালি ডেস্ক: ভারতের অখ্যাত এক ছোট্ট গ্রাম রামগড় বদলে দিয়েছিল বলিউডের ইতিহাস। সালটা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ঠাকুরের ডাকে দুই তরুণ জয় ও বীরুর ডাকাত ধরার গল্প বলিউডে নতুন ইতিহাস তৈরি করে। মুক্তি পেয়েছিল হিন্দি চলচ্চি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী সিনেমা “ শোলে”। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত হিন্দি সিনেমাটি ৫০ বছর পর আবার বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে। পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও “শোলে” সিনেমার আবেদন এতটুকু কমেনি! ভারত, বাংলাদেশ-এমনকি আমেরিকা ও ইউরোপে থাকা প্রবাসী ভারতীয় ও বাঙালীদের মাঝে “শোলে” মুভি নিয়ে আজও কথা হয়। গাব্বার সিংয়ের সংলাপ আজও কেউ কি ভুলতে পেরেছেন কিংবা  শোলে’র অনুকরণে নির্মিত বাংলাদেশের “ দোস্ত দুশমন-এ অভিনয় করা প্রয়াত অ্যাকশন লিজেন্ড জসিমের কথা।

রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় সেলিম-জাভেদ জুটির চিত্রনাট্যে গড়ে ওঠা “শোলে” সিনেমা ভারতে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিল। এতদিন পর এসে “শোলে” সিনেমার আসল শেষাংস ও কিছু বাদ দেওয়া দৃশ্য পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। সিনেমার নতুন সংস্করণটি ইতিমধ্যে ইতালির বোলেনিয়ায় ইল সিনেমা রিট্রোভাতায় প্রথমবার প্রদর্শিত হয়েছে।

“শোলে” সিনেমার কথা উঠলেই অনেকে নস্টালজিক হয়ে পড়েন! ভারতীয় ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির হিস্টরি বদলে দেওয়া মুভিতে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমামালিনি, জয়া ভাদুরী, সঞ্জীব কুমার ও “গাব্বার সিং” চরিত্রে আমজাদ খান। ‘শোলে’র কাহিনী পশ্চিমা ও জাপানি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হলেও এটি নির্মিত হয়েছিল ভারতীয় আবহেই।

“শোলে’তে ভালো ও মন্দের লড়াই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রামগড় নামে কাল্পনিক গ্রামে দুই চোর জয় ও বীরুকে ডাকাত গাব্বার সিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিয়োগ দেন এক সাবেক পুলিশ, ঠাকুর বলদেব সিং।

মুক্তির পর “ শোলে” সিনেমাটি রেকর্ড গড়েছিল। মুম্বাইয়ের মিনার্ভা হলে টানা পাঁচ বছর চলেছিল ছবিটি। বিবিসি ইন্ডিয়ার জরিপে শতাব্দীর সেরা সিনেমা সিনেমা নির্বাচিত হয় “শোলে”। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট “শোলে’কে ভারতের সেরা সিনেমা হিসাবে ঘোষণা করে। ‘শোলে’ সিনেমার গান ও সংলাপের ক্যাসেট ও রেকর্ড অর্ধমিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছিল। ‘শোলে’ শুধু একটি সিনেমা নয়, হয়ে উঠেছিল সংস্কৃতির প্রতিক। এই সিনেমার সংলাপ, বিয়ে, রাজনীতি এবং বিজ্ঞাপন চিত্রেও বলা হয়!

যে সিনেমাটি এত বিখ্যাত সেই সিনেমায় যারা অভিনয় করেছেন তারা কি বলেছিলেন? ধর্মেন্দ্র বলেছেন,“ ‘শোলে’ বিশ্বের অষ্টম বিস্ময়” অমিতাভ বচ্চন বলেছেন,“ এই সিনেমা শুট করার সময় বুঝিনি এটা এত বিখ্যাত হবে। তবে এটা আমার জীবনের এক স্মরণীয় সময় ছিল।”

“শোলে” সিনেমার শেষাংশে দেখানো হয়েছিল ঠাকুর গাব্বারকে হত্যা করার দৃশ্য। কিন্তু সেন্সর বোর্ড এখানে আপত্তি জানায়। তারা মনে করেছিল, একজন সাবেক পুলিশ এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। সে সময় ভারতে জরুরি অবস্থা চলছিল, যে কারণে সেন্সরের নিয়ম ছিল অনেক কড়া। শেষমেষ পরিচালক রমেশ সিপ্পি সিনেমার শেষাংশ পরিবর্তন করে দেখান, গাব্বার সিং ধরা পড়েন, মারা যায় না। এরপরই “ শোলে” সিনেমাটি ছাড়পত্র পেয়েছিল।

তবে মুক্তির সময় “শোলে’ প্রশংসিত হয়নি। বরং অনেকে সমালোচনা করেছেন। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে “শোলে” সিনেমাকে বলেছিল “নিভে যাওয়া কয়লা।” ফিল্মফেয়ারের এক লেখক বলেছিলেন,“ শোলে না ভারতীয় না পশ্চিমা।” প্রথম সপ্তাহে “দর্শক তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি । দর্শক একেবারেই নিরব ছিলেন। তৃতীয় সপ্তাহে এসে সংলাপ বলতে শুরু করে এবং একেকজন দ্বিতীয়বার সিনেমাটি দেখতে আসে। একমাস পর সিনেমাটির সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে-এরপরই সিনেমাটি ঘুরে দাঁড়ায়। গাব্বার সিং চরিত্রটি ভয়ংকর হলেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

শুধু ভারত নয়, পৃথিবীব্যাপী শোলে’র জয়ধ্বনী উঠেছিল। ব্যতিক্রম ছিল না বাংলাদেশও। ‘শোলে’ বাংলাদেশে এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠল যে নামী পরিচালক দেওয়ান নজরুল “শোলে’র অনুকরণে নির্মাণ করলেন “ দোস্ত দুশমন”। বাংলাদেশের অ্যাকশন হিরো জসিম অভিনয় করেন গাব্বার সিংয়ের চরিত্রে। জসিম এতটাই দুর্দান্ত অভিনয় করেন যে স্বয়ং শোলের গাব্বার সিং আমজাদ খান জসিমের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জসিমের ভয়ংকর সুন্দর অভিনয় যেন বাংলা সিনেমায় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে! কেউ ভাবতে পারেননি জসিম “ দোস্ত দুশমন” করে এতটা জনপ্রিয়তা পাবেন। এখানে অমিতাভ বচ্চনের চরিত্রে অভিনয় করেন সোহেল রানা, ধর্মেন্দ্রর চরিত্রে ওয়াসিম। একইসঙ্গে হেমামালিনির চরিত্রে শাবানা এবং জয়া ভাদুড়ীর চরিত্রে অভিনয় করেন সুচরিতা।

প্রবাসী বাংলাদেশ ও ভারতীয় যারা ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তারা জানেন ‘শোলে’ শুধু সিনেমা নয় যেন শৈশবে ডুব দেওয়া। প্রবাসে ‘শোলে’ সিনেমা আজও পারিবারিক বন্ধনের অংশ। অনেকে এই সিনেমাটিকে ছেলে-মেয়েকে দেখান।

শোলে’র ৫০ বছর মানে এক স্মৃতির রোলার কাস্টার। যেখানে পুরোনো দিনের স্মৃতি, ভয়ংকর গাব্বার সিং, অসাধারণ জয়-বীরুর বন্ধুত্ব-আর বাস্তবতা মিলেমিশে এক হয়ে যায়। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রতিটা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের মনে শোলে সিনেমা রেখে গিয়েছে এক অন্যরকম ছাপ! তাই বলা যায়, ‘শোলে’ শুধু বলিউডের সিনেমা নয় আমাদের সকলের সিনেমা।

আপনি কি ভারতের ‘শোলে’ কিংবা বাংলাদেশের “দোস্ত দুশমন” দেখেছেন? গাব্বার সিং চরিত্রে শোলের আমজাদ খান না দোস্ত দুশমনের জসিম কার অভিনয় আপনার ভালো লেগেছে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *