রুপালি ডেস্ক: একটা সম্পর্ক যখন ভাঙে, তার কষ্টটা শুধু দুজন মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশেষ করে, যখন সেই জুটি হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ভালো বাসার এক প্রতিচ্ছবি। তাহসান এবং মিথিলা…শুধু দুটি নাম নয়, বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁরা ছিলেন এক আইকনিক জুটি। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা দীর্ঘশ্বাস আর না বলা কষ্টের কথা কি আমরা জানতাম?
মিথিলা মুখ খুলেছেন তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া সেই কঠিনতম অধ্যায় নিয়ে। আজ আমরা শুধু মিথিলার বিচ্ছেদের খবর নয়, জানবো একজন নারীর একাকী লড়াই, মানসিক সংগ্রাম এবং অবশেষে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের কথা।
তাহসান-মিথিলার বিচ্ছেদ ছিল মিডিয়ার আলোচিত ঘটনার একটি। ২০১৭ সালে বিচ্ছেদের পথে হাঁটে এ জুটি। তবে মিথিলা জানিয়েছেন, এর দুই বছর আগে থেকেই আলাদা থাকছিলেন তাঁরা। মিথিলা ভেবেছিলেন, হয়তো শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা আর হয়নি, বিচ্ছেদই হয়ে যায়। তখন মানসিক ও অর্থনৈতিক অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল মিথিলাকে।
২০০৬ থেকে ২০১৭ প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গান, অভিনয় আর ভালোবাসায় তাহসান-মিথিলা বুনেছিলেন এক স্বপ্নের সংসার। তাঁদের দেখে অনেকেই ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে শিখেছিলেন। যখন তাঁদের কোল আলো করে এলো কন্যা আয়রা, তখন পরিবারটি যেন পূর্ণতা পেল। কিন্তু আলোর নিচে যে অন্ধকারের বীজ বোনা হচ্ছিল, তার খবর ক’জনই বা রেখেছিল?
এশা রুশদীর পডকাস্টে মিথিলা যা বললেন, তা অনেককেই অবাক করেছে। আমরা জানতাম, তাঁদের বিচ্ছেদ হয়েছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু মিথিলা জানালেন, ঝড়ের শুরুটা হয়েছিল আরও দুই বছর আগে ২০১৫ সালে!
মিথিলা বলেন “আমি অপেক্ষা করেছি, ভেবেছি যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। একবার ভাবুন, একজন নারী একটি মৃতপ্রায় সম্পর্ককে বাঁচানোর জন্য দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছেন! কেন? কারণ, তাঁর কোলে তখন এক বছরের একটি শিশু। তিনি ছিলেন একজন তরুণী মা, যিনি নিজের জীবনের ভালো-মন্দ বিচার করার মতো মানসিক শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলেন।”
মিথিলা আরও বলেন, ‘ আমরা ২০১৫ সালে সেপারেশনে গিয়েছি, তারপর আরও দুই বছর কেটে গিয়েছে। আমি অপেক্ষা করেছি, ভেবেছি যে এটা ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক হয়ে যাবে। ২০১৭ সালে এসে সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম যে মনে হয় সম্পর্কটা আসলেই কাজ করবে না। আমি ছিলাম তখন অনেক অল্প বয়সী এবং মা হিসেবেও তরুণী। আমি যে কোনো একটা ভালো-মন্দ বিচার করব বা কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসব, সেটার শক্তিই আমার ছিল না। কারণ, আমার একটা এক বছরের বাচ্চা। আমার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না, যেখানে আমি কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব নিজের জীবনের।’
আমাদের সমাজে একজন ডিভোর্সি বা সিঙ্গেল মাদারের পথটা কতটা কঠিন, তা আমরা সবাই জানি। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক লাঞ্চনা আর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা-এই সবকিছু একা হাতে সামলানো কতটা কঠিন, মিথিলার কথাগুলো আমাদের সেই বাস্তবতার মুখোমুখি করে দেয়।
কঠিন সেই সময়ে শুধু মানসিকভাবে নয়, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছিল মিথিলাকে। তিনি বলেন, ‘২৩ বছর বয়স থেকে আমি আমার জীবনকে একভাবে ভেবে এসেছিলাম। হঠাৎ করে জীবনটা সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সঙ্গে থাকতাম, একে তো আমার বাচ্চা আছে, তারপর আমি জানলাম সেই জায়গাটা আমার ভবিষ্যত না। তখন চাকরি করতাম, বছরে এক-দুইটা কাজও করতাম। কিন্তু আমার একটা গাড়িও ছিল না। আমার তো অভ্যাস ছিল গাড়িতে করে বাইরে যাওয়ার, আমার বাচ্চার অভ্যাস ছিল গাড়িতে চড়ার।’
একজন সাধারণ নারীর জন্যই এই পথ কঠিন। আর মিথিলা তো একজন তারকা! প্রতিটা পদক্ষেপ মিডিয়ার নজরে। ‘কেন বিচ্ছেদ হলো?’, ‘কার দোষ ছিল?’-এই ধরনের হাজারো প্রশ্নের চাপ সামলে নিজের ও সন্তানের জন্য একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ঘুরে দাঁড়ানো। মিথিলা সেই কঠিন সময় পার করে আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি একাধারে একজন সফল অভিনেত্রী, একজন উন্নয়নকর্মী, একজন গর্বিত মা। তাঁর এই যাত্রা প্রমাণ করে, শেষ বলে কিছু নেই। জীবনের যেকোনো পরিস্থিতি থেকেই নতুন করে শুরু করা যায়। তিনি দেখিয়েছেন, একজন নারী কতটা শক্তিশালী হতে পারে। জীবনের নতুন পথে বেশ কয়েক বছর হলো মিথিলার সঙ্গী এখন পশ্চিমবঙ্গের পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। তাহসানের সাথে বিচ্ছেদের পর সৃজিতের সাথেই তিনি এখন সংসার করছেন।
তাহসান-মিথিলার ডিভোর্স নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? কার দোষে আইকনিক এই জুটির ডিাভোর্স হয়েছিল, কমেন্ট করে জানাতে পারেন?