রুপালি ডেস্ক: বাংলা চলচ্চিত্রে ‘কৌতুক’ শব্দের প্রতিশব্দ ছিলেন ‘দিলদার’। মানুষকে কাঁদানো সহজ, হাসানো কঠিন। আর এই কঠিন কাজটিই অবলিলায় করে গিয়েছেন কৌতুক সম্রাট দিলদার। পর্দায় তাকে দেখলেই দর্শকরা হাসতেন। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে একক আধিপত্য দেখিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি।
বাংলা চলচ্চিত্রে ক্ষণজন্মা এক শিল্পীর নাম দিলদার। যিনি বহুমাত্রিক অভিনয় দিয়ে দর্শকহৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা দখল করে নিয়েছেন। ছবিতে দিলদারের উপস্থিতি মানেই বাড়তি আনন্দ। আশি-নব্বই দশকে বেশিরভাগ ছবিতে দিলদারকে রাখা পরিচালকরা নিয়মে পরিণত করেছিলেন। হবেই না-বা কেন, তার কৌতুকমাখা অভিনয় যে ছিল সবার ভীষণ পছন্দের। এ কারণে দিলদারকে ছাড়া ছবিই জমতো না!
কিংবদন্তি শিল্পী দিলদারের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাদপুরে। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয়। এরপর ধীরে ধীরে দিলদার হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌতুক অভিনেতা। দিলদার এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তাকে ‘নায়ক’ বানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ ছবি। তোজাম্মেল হক বকুলের সেই ছবিটি সুপারহিট হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, এমন অসংখ্য ছবি ছিল যেখানে পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার দিলদারের কথা ভেবেই গল্প লিখতেন। তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে দিলদার না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। আজও দর্শকরা দিলদারকে মিস করেন। তার মতো কৌতুক অভিনেতা বাংলা চলচ্চিত্রে আর আসেনি।
অভিনয় দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে যিনি ঋণী করে গেলেন মৃত্যুর পর তার পরিবার-পরিজনের কে কোথায়, কোন অবস্থায় আছেন, এই খোঁজটুকু নেয়নি চলচ্চিত্রের দায়িত্বশীল কেউই! ভিতরে জমে থাকা ক্ষোভ গণমাধ্যমে উগরে দিয়েছেন দিলদারের কনিষ্ঠ কন্যা জিনিয়া আফরোজ। তিনি বলেন: আব্বা মারা যাওয়ার পর আমাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। কখনও যদি কোনো কারণে দেখা হয়ে যায়, তখন লোক দেখানোর জন্য খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এগুলো আর্টিফিসিয়াল মনে হয়। এমনও হয়েছে, দরকারে সিনেমা অঙ্গনের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলেও তারা এড়িয়ে গিয়েছেন।”
উদাহরণ টেনে দিলদার কন্যা বলেন, “২০১৮ সালে শিল্পী সমিতিতে একবার একটা কাজে গিয়েছিলাম। দিলদারের মেয়ে শুনে মুখে মুখে শুধু কথা বলেছিল, এরপর যে দরকারে গিয়েছিলাম সেটার সমাধান দিতে পারেনি ওখান থেকে। এরপর থেকে আর যাইনি, কেউ খোঁজও নেয়নি।”
দিলদারের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন আরেক কৌতুক অভিনেতা আনিস। দিলদার কন্যা বলেন,“ কৌতুক অভিনেতা আনিস আঙ্কেল বাবার অনেক কাছের বন্ধু ছিলেন। আমাদের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনিও বেঁচে নেই। নায়ক মান্না বেঁচে থাকাকালীন আমাদের টুকটাক খবর নিতেন। এখন কেউ খোঁজ নেয় না। তবে আব্বা বিএনপি’র জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ, জিসাস-এর সভাপতি ছিলেন। মারা যাওয়ার পর প্রথম তিন-চার বছর সংগঠনটি আব্বার মৃতুবার্ষিকী পালন করতো। আজকাল আর কেউ মনে রাখে না। ন্যূনতম খোঁজ-খবরও নেয়না কেউ।”
দিলদার কন্যার ভাষ্য,“ আমাদের এখন যা কিছু আছে সবকিছু আমার মা দেখাশোনা করেন। উনারও বয়স হয়েছে ৬৫ বছরের কাছাকাছি। আমাদের সংসার রয়েছে, তার ফাঁকেও দেখভাল করি যতটুকু পারি। আমার তো কোনো ভাই নেই, তাই আম্মাকে আমাদের দুই বোনকেই দেখতে হয়। মা থাকেন ডেমরা একালায়। আব্বা যা আয় করতেন ওখান থেকে টাকা জমিয়ে ডেমরা তে একটা পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। ওই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। এখন চারতলা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া এবং পাঁচ তলায় মা থাকেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর এবং ঢাকায় আমাদের দুই বোনের কাছেও থাকেন।”
দিলদার নেই বহুদিন হলো। আজও একজন দিলদারের জন্য কান পাতলেই হাহাকার শোনা যায়। দিলদার এমন একজন ছিলেন যার পর্দায় উপস্থিতিই দর্শকদের মাঝে হাসির রোল ফেলে দিত! কৌতুক সম্রাট দিলদারের কোন ছবিটির কথা আপনার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে?